মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয়

 মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক কেন হয়

মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: এটি অনিয়মিত মাসিকের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। মেয়েদের মাসিক চক্র ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই হরমোনগুলোর ভারসাম্যে কোনো রকম সমস্যা হলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। এর কারণ হতে পারে:

  • পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এটি একটি সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা যেখানে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং পুরুষালি হরমোন বেশি উৎপন্ন হয়, যা ডিম্বস্ফোটনে বাধা দেয়।

  • থাইরয়েড সমস্যা: হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের কম উৎপাদন) বা হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের বেশি উৎপাদন) মাসিকের অনিয়মিত হওয়ার কারণ হতে পারে।

  • প্রোল্যাকটিন হরমোনের আধিক্য: এটি এমন একটি হরমোন যা দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে। এর মাত্রা বেড়ে গেলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

  • পেরিমেনোপজ: মেনোপজের আগে (সাধারণত ৪০ এর কোঠায়) হরমোনের পরিবর্তন হতে থাকে, যার ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়।

২. জীবনযাত্রার পরিবর্তন:

  • মানসিক চাপ (Stress): অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে মাসিকের অনিয়মিত হওয়ার কারণ হতে পারে।

  • খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত খাবার, প্যাকেট খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, অপর্যাপ্ত পুষ্টি অথবা হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস মাসিকের অনিয়ম ঘটাতে পারে।

  • শারীরিক পরিশ্রম: অতিরিক্ত বা তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ (যেমন: দীর্ঘ দূরত্বের দৌড়বিদ বা জিমন্যাস্ট) মাসিককে প্রভাবিত করতে পারে।

  • অপর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের অভাবও হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে।

  • ধূমপান ও অ্যালকোহল: এগুলো হরমোনের মাত্রা এবং মাসিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে।

৩. জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি: জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল, ইনজেকশন, প্যাচ বা আইইউডি (IUD) ব্যবহারের কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে বা বন্ধও হয়ে যেতে পারে। পদ্ধতি পরিবর্তন করলেও এমনটা হতে পারে।

৪. গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান:

  • গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী হলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

  • স্তন্যদান: স্তন্যদানকারী মহিলাদের মাসিক নিয়মিত নাও হতে পারে।

৫. কিছু স্বাস্থ্যগত অবস্থা:

  • এন্ডোমেট্রিওসিস: জরায়ুর ভেতরের টিস্যু জরায়ুর বাইরে জন্মালে এটি মাসিক অনিয়মিত করতে পারে এবং ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

  • পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (PID): প্রজননতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ অনিয়মিত মাসিক এবং পেলভিক ব্যথা সৃষ্টি করে।

  • জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পলিপ: জরায়ুতে ফাইব্রয়েড (সাধারণত নিরীহ টিউমার) বা পলিপ (ছোট বৃদ্ধি) থাকলে অতিরিক্ত রক্তপাত এবং অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।

  • ডায়াবেটিস: কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, হরমোনের ওঠানামা ঘটাতে পারে যা মাসিককে প্রভাবিত করে।

  • অকাল ডিম্বাশয় ব্যর্থতা (Premature Ovarian Failure - POF): যদি ৪০ বছর বয়সের আগে ডিম্বাশয় কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তবে মাসিক অনিয়মিত বা বন্ধ হয়ে যায়।

৬. কিছু ঔষধ: কিছু নির্দিষ্ট ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

৭. বয়ঃসন্ধি: প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার পরের কয়েক বছর সাধারণত মাসিক অনিয়মিত হতে পারে, কারণ এই সময়ে হরমোনগুলো স্থিতিশীল হতে কিছুটা সময় নেয়।

যদি আপনার মাসিক অনিয়মিত হয় এবং আপনি চিন্তিত হন, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। সঠিক কারণ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন