অবিবাহিত মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়

 অবিবাহিত মেয়েদের সাদা স্রাব কেন হয়


অবিবাহিত মেয়েদের সাদা স্রাব হওয়া একটি **সাধারণ এবং স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া**। এটি বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু হয়ে প্রজনন ক্ষমতা সক্রিয় থাকা পর্যন্ত যেকোনো মেয়েরই হতে পারে। সাধারণত যোনি এবং জরায়ুর দেয়াল থেকে নিঃসৃত এক ধরনের তরল পদার্থ এটি, যা যোনিপথকে পরিষ্কার এবং সংক্রমণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। --- ### **সাদা স্রাব (লিউকোরিয়া) হওয়ার স্বাভাবিক কারণগুলো:** * **হরমোনের পরিবর্তন:** মেয়েদের মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে হরমোনের মাত্রার ওঠানামা হয়। বিশেষ করে ডিম্বস্ফোটনের (Ovulation) সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাদা স্রাবের পরিমাণ বেশি হতে পারে। এই সময় স্রাব পাতলা এবং স্বচ্ছ হতে পারে। মাসিকের আগে বা পরেও এটি দেখা যায়। * **যৌন উত্তেজনা:** যৌন উত্তেজনার সময় যোনিপথে রক্ত ​​প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সাদা স্রাবের পরিমাণ বাড়তে পারে। * **শারীরিক পরিচ্ছন্নতা:** যোনিপথ প্রাকৃতিকভাবে নিজেকে পরিষ্কার করে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুরনো কোষ এবং ব্যাকটেরিয়া এই স্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। * **গর্ভাবস্থা:** যদিও অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়, তবে জেনে রাখা ভালো যে গর্ভাবস্থার শুরুতে হরমোনজনিত কারণে স্রাব বেশি হয়। --- ### **কখন সাদা স্রাব অস্বাভাবিক হতে পারে?** যদি সাদা স্রাবের পরিমাণ, রঙ, গন্ধ বা স্থিতিতে পরিবর্তন আসে এবং এর সাথে অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তা অস্বাভাবিক হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অস্বাভাবিক সাদা স্রাবের কিছু কারণ: * **ইস্ট ইনফেকশন (Candida Infection):** যোনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে ঘন, সাদা, দই বা পনিরের মতো জমাট বাঁধা স্রাব হতে পারে। এর সাথে যোনিপথে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং লালচে ভাব দেখা দিতে পারে। * **ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (Bacterial Vaginosis - BV):** এটি যোনিতে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়। এক্ষেত্রে পাতলা, ধূসর বা সাদা স্রাব হতে পারে এবং এতে মাছের মতো দুর্গন্ধ থাকতে পারে, যা যৌন মিলনের পর আরও তীব্র হয়। * **যৌনবাহিত সংক্রমণ (Sexually Transmitted Infections - STIs):** গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিসের মতো যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণেও অস্বাভাবিক স্রাব হতে পারে। এই স্রাব হলুদ, সবুজ বা ফেনাযুক্ত হতে পারে এবং এর সাথে চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। অবিবাহিত মেয়েদের যদি যৌন কার্যকলাপ থাকে, তাহলে এটি একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। * **অপরিচ্ছন্নতা:** যোনিপথের আশেপাশে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় না রাখলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। * **পুষ্টির অভাব:** শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও পুষ্টির অভাবেও যোনিপথের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা অস্বাভাবিক স্রাবের কারণ হতে পারে। * **অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড ব্যবহার:** কিছু ওষুধের ব্যবহারের কারণে যোনিপথের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। * **ডায়াবেটিস:** ডায়াবেটিস আক্রান্তদের যোনিতে ইস্ট সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। --- ### **কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?** যদি সাদা স্রাবের সাথে নিচের উপসর্গগুলো থাকে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত: * স্রাবের রঙ হলুদ, সবুজ বা ধূসর হলে। * স্রাবের সাথে তীব্র দুর্গন্ধ থাকলে। * যোনিপথে তীব্র চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা থাকলে। * প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা হলে। * পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি থাকলে। * যৌন মিলনের সময় ব্যথা হলে। মনে রাখবেন, স্বাভাবিক সাদা স্রাব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা যোনিপথকে সুস্থ রাখে। তবে যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন