মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে কিছু সাধারণ কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. হরমোনের পরিবর্তন
নারীদের চুল পড়ার একটি বড় কারণ হলো হরমোনের তারতম্য।
গর্ভাবস্থা ও প্রসবোত্তর অবস্থা: গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মের পর হরমোনের পরিবর্তনের কারণে অনেক মহিলার চুল বেশি ঝরে। এটি সাধারণত ৩-৪ মাস পর স্বাভাবিক হয়ে আসে।
মেনোপজ: মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায়, যা চুল পাতলা হওয়ার কারণ হতে পারে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল: কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল (প্রোজেস্টেরন হরমোনযুক্ত) চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
PCOS (Polycystic Ovary Syndrome): এই অবস্থায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়।
থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড হরমোনের (হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম) ভারসাম্যহীনতাও চুল পড়ার অন্যতম কারণ।
২. পুষ্টির অভাব
চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন। এদের অভাবে চুল পড়তে পারে।
আয়রনের অভাব: রক্তাল্পতা (Anemia) বা আয়রনের ঘাটতি মহিলাদের চুল পড়ার একটি সাধারণ কারণ।
ভিটামিন ডি ও বি-১২ এর অভাব: এই ভিটামিনগুলির অভাবে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে, কারণ এগুলো চুলের বৃদ্ধি ও মাথার ত্বকের পুষ্টিতে সাহায্য করে।
প্রোটিনের অভাব: চুলের প্রধান উপাদান হলো প্রোটিন। পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাবে চুল দুর্বল হয়ে ঝরে যেতে পারে।
জিংক ও বায়োটিনের অভাব: এই খনিজ এবং ভিটামিনগুলির অভাবেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. মানসিক চাপ ও জীবনযাপন
তীব্র মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ (যেমন: অসুস্থতা, অস্ত্রোপচার, মানসিক আঘাত) "টেলোজেন এফ্লুভিয়াম" নামক এক ধরনের চুল পড়ার কারণ হতে পারে, যেখানে প্রচুর চুল একবারে বিশ্রাম পর্বে চলে যায় এবং ঝরে পড়ে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবও চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
৪. স্বাস্থ্যগত সমস্যা
অটোইমিউন রোগ: অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা (Alopecia Areata) এর মতো অটোইমিউন রোগগুলিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা চুলের ফলিকলকে আক্রমণ করে, যার ফলে নির্দিষ্ট অংশে চুল পড়ে যায়।
মাথার ত্বকের সংক্রমণ: ছত্রাক সংক্রমণ বা অন্যান্য ত্বকের সমস্যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে।
৫. জেনেটিক কারণ
অনেক সময় পরিবারে চুল পড়ার ইতিহাস থাকলে (Female Pattern Baldness বা Female Pattern Hair Loss) মেয়েদের মধ্যেও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এটি বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে পারে।
৬. চুলের যত্ন ও স্টাইলিং
অতিরিক্ত তাপ: হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লিং আয়রনের মতো তাপ প্রয়োগকারী যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
কঠোর রাসায়নিক: চুলে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক পদার্থ (যেমন – হেয়ার কালার, পার্ম) চুলের ক্ষতি করতে পারে।
শক্ত করে চুল বাঁধা: টাইট ব্রেড, পনিটেল বা অন্যান্য শক্ত করে বাঁধা চুলের স্টাইল "ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়া" নামক চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
৭. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু নির্দিষ্ট ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পড়তে পারে, যেমন: ক্যান্সারের কেমোথেরাপি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, বিষণ্নতা বা বাতের কিছু ঔষধ।
আপনার যদি অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকে, তবে এর সঠিক কারণ জানতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য একজন ত্বক বিশেষজ্ঞের (Dermatologist) পরামর্শ নেওয়া উচিত।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন