ঈদের নামাজের নিয়ম মেয়েদের
ইসলামী শরিয়তে মেয়েদের জন্য ঈদের নামাজ ফরজ নয়, বরং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। অর্থাৎ, এটি অত্যাবশ্যকীয় সুন্নত, যা পালন করলে সওয়াব আছে, আর না করলেও গোনাহ হবে না। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে সাহাবিয়ারা ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করতেন। তাই মহিলারা যদি পূর্ণ পর্দার সাথে এবং ফেতনামুক্ত পরিবেশে ঈদগাহে বা মসজিদে যেতে পারেন, তাহলে তাদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করা জায়েজ এবং এতে সওয়াব রয়েছে।
তবে, বর্তমান সময়ে ফেতনার আশঙ্কাসহ বিভিন্ন কারণে অনেক আলেম মহিলাদের ঘরে নামাজ আদায় করাকেই উত্তম বলেছেন। যদি মহিলাদের জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে উপযুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ না থাকে, তাহলে তাদের জন্য ঘরে থাকাই ভালো।
মেয়েদের ঈদের নামাজ আদায় করার নিয়ম
মহিলারা যদি ঈদগাহে বা মসজিদে ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাদের নামাজের নিয়ম পুরুষের মতোই। সাধারণত, ঈদের নামাজ ২ রাকাত এবং এতে অতিরিক্ত তাকবীর থাকে। নিচে সাধারণ নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
১. নিয়ত: মনে মনে ঈদের ২ রাকাত নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সাথে এই ইমামের পেছনে কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি - এমন নিয়ত করা। মুখে নিয়ত বলা জরুরি নয়।
২. প্রথম রাকাত:
* ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে বাঁধতে হবে।
* এরপর ছানা পড়তে হবে: "সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।"
* এরপর ইমাম অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দেবেন। প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দিতে হবে। তৃতীয় তাকবীরের পর হাত বাঁধতে হবে।
* তারপর ইমাম সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন।
* এরপর যথারীতি রুকু ও সিজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে।
৩. দ্বিতীয় রাকাত:
* দ্বিতীয় রাকাতে উঠে ইমাম প্রথমে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পাঠ করবেন।
* এরপর অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দেবেন। প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত তুলে ছেড়ে দিতে হবে। তৃতীয় তাকবীরের পর আর হাত বাঁধা যাবে না, বরং সোজা রুকুর জন্য তাকবীর দিতে হবে।
* এরপর যথারীতি রুকু, সিজদা ও শেষ বৈঠকে বসে তাশাহহুদ, দরূদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
৪. খুতবা: ঈদের নামাজের পর ইমাম খুতবা দেন। মহিলাদের জন্য খুতবা শোনা জরুরি নয়, তবে শুনলে সওয়াব হয়। ঋতুবতী মহিলারা নামাজ আদায় করতে পারবেন না, কিন্তু তারা ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে খুতবা শুনতে এবং মুসলমানদের দোয়ায় শরিক হতে পারবেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
পর্দা: যদি মহিলারা ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে অবশ্যই পূর্ণ পর্দার সাথে বের হতে হবে।
নিরাপত্তা: ফেতনামুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশে ঈদগাহে যাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
বাড়িতে নামাজ: যদি ঈদগাহে বা মসজিদে যাওয়ার পরিবেশ উপযুক্ত না হয়, তাহলে ঘরে নামাজ আদায় না করে নফল ইবাদত করা উত্তম। কারণ, ঈদের নামাজ জামাতে আদায় করা সুন্নত। মহিলারা ঘরে একা ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন না।
আশা করি এই তথ্য আপনার জন্য সহায়ক হবে। ঈদ মোবারক!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন