মেয়েদের উচ্চতা বৃদ্ধির উপায়
মেয়েদের উচ্চতা মূলত জেনেটিক্স (বংশগত), অর্থাৎ বাবা-মায়ের উচ্চতার উপর অনেকটাই নির্ভর করে। তবে, বয়ঃসন্ধিকালের আগে পর্যন্ত কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করলে উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা হতে পারে। একবার গ্রোথ প্লেট (growth plates) বন্ধ হয়ে গেলে, সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের পর, উচ্চতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় না।
উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার
উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সঠিক পুষ্টি অত্যন্ত জরুরি। হাড় ও পেশীর সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত:
প্রোটিন: প্রোটিন পেশী ও কোষ গঠনে সাহায্য করে। ডিম, মুরগির মাংস, মাছ, সয়াবিন, ডাল, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস।
ক্যালসিয়াম: হাড়ের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। দুধ, দই, পনির, সবুজ শাকসবজি (যেমন পালংশাক), তিলের বীজ ইত্যাদিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে।
ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে, যা হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়ক। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস। এছাড়াও, মাছ (স্যালমন, টুনা), ডিমের কুসুম এবং কিছু দুগ্ধজাত দ্রব্যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
জিঙ্ক: জিঙ্ক হাড়ের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাদাম, বীজজাতীয় খাবার, শিম, ছোলা ইত্যাদিতে জিঙ্ক থাকে।
ভিটামিন ও খনিজ: রঙিন শাকসবজি, ফল (যেমন আপেল, কলা, সাইট্রাস ফল), গোটা শস্য ইত্যাদি ভিটামিন এ, সি, কে, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম এবং ফসফরাস সরবরাহ করে যা শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
অশ্বগন্ধা: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অশ্বগন্ধা উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হরমোনকে উত্তেজিত করতে পারে।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: জাঙ্ক ফুড, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো শরীরের পুষ্টির শোষণে বাধা দিতে পারে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের সময় শরীরের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন (HGH) নিঃসৃত হয়, যা উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। পর্যাপ্ত ঘুম, বিশেষ করে গভীর ঘুম, এই হরমোন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বয়সের উপর নির্ভর করে, কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিন ৮-১১ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ এবং নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে যখন গ্রোথ প্লেট সক্রিয় থাকে। এই ব্যায়ামগুলো মেরুদণ্ডকে লম্বা করতে এবং শরীরের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম: মেরুদণ্ড এবং শরীরের অন্যান্য পেশী প্রসারিত করতে সাহায্য করে, যা উচ্চতাকে লম্বা দেখাতে পারে এবং সঠিক ভঙ্গিমা বজায় রাখে। যেমন:
ঝুলে থাকা (Hanging): একটি বারে ঝুলে থাকা মেরুদণ্ডকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে।
কোবরা স্ট্রেচ (Cobra Stretch): এই যোগব্যায়ামটি মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং প্রসারিত করে।
ধনুরাসন (Bow Pose): এটিও মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বাড়ায়।
হস্তপদাসন: মেরুদণ্ড সোজা রেখে উপরের দিকে হাত তুলে ধীরে ধীরে শরীরের ওপরের অংশকে সামনের দিকে বাঁকিয়ে হাঁটুতে কপাল ছোঁয়ানোর চেষ্টা করা।
লাফানোর ব্যায়াম: দড়ি লাফ, বাস্কেটবল, ভলিবল, জগিং, সাঁতার এবং সাইকেল চালানো ইত্যাদি খেলাধুলা হাড়ের বৃদ্ধি এবং গ্রোথ হরমোনের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করতে পারে।
সঠিক বসার ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি: কুঁজো হয়ে বসা বা হাঁটার অভ্যাস উচ্চতাকে খাটো দেখাতে পারে। মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসা এবং হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
৪. মানসিক চাপমুক্ত জীবন
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের বৃদ্ধি হরমোন নিঃসরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা পছন্দের কোনো কাজ করা যেতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
গ্রোথ প্লেট বন্ধ হওয়া: মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৬-১৮ বছর বয়সের মধ্যে গ্রোথ প্লেট বন্ধ হয়ে যায়, যার পর উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হয় না।
বংশগত কারণ: উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো সহায়ক হলেও, একজন ব্যক্তির চূড়ান্ত উচ্চতা মূলত তার জিন দ্বারা নির্ধারিত হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি উচ্চতা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরের সার্বিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন