ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাতা কে

 ইসরাইলের প্রতিষ্ঠাতা কে

ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় কোনো একক ব্যক্তি নেই। এটি একটি জটিল ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার ফল, যার পেছনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও আন্দোলনের অবদান রয়েছে। তবে, এই প্রক্রিয়ার দুটি প্রধান দিক রয়েছে:

  • রাজনৈতিক জায়নবাদের প্রতিষ্ঠাতা: থিওডোর হার্জল-কে আধুনিক রাজনৈতিক জায়নবাদের জনক বলা হয়। ১৮৯৬ সালে তিনি তার বিখ্যাত বই ডের জুডেনস্টাট (The Jewish State) প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ইহুদি জনগণের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তি দেন। তার এই ধারণা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করে।

  • রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠাতা: ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি ইসরায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং এর প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের একজন প্রধান নেতা হিসেবে বিবেচিত। তিনি ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার জন্য পরিচালিত রাজনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেন।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব

ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের অবদান আছে:

  • চেইম উইজম্যান: তিনি ছিলেন একজন জায়নবাদী নেতা এবং ইসরায়েলের প্রথম রাষ্ট্রপতি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বালফোর ঘোষণা (১৯১৭) আদায়ে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যা ফিলিস্তিনে একটি ইহুদি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্রিটিশ সমর্থন নিশ্চিত করে।

  • আর্থার জেমস বালফোর: তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ১৯১৭ সালে তার স্বাক্ষরিত বালফোর ঘোষণাটিই মূলত ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার আইনি ভিত্তি প্রদান করে।

ইসরায়েল কোনো একক ব্যক্তির হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বরং এর পেছনে দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক আন্দোলন এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবদান রয়েছে। তবে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের আধুনিক প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি যার নাম উল্লেখ করা হয় তিনি হলেন ডেভিড বেন-গুরিয়ন

ডেভিড বেন-গুরিয়নের ভূমিকা

  • প্রথম প্রধানমন্ত্রী: ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ইসরায়েল স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর তিনি দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন এবং এই পদটি তিনি দীর্ঘ সময় ধরে (১৯৪৮-১৯৫৪ এবং ১৯৫৫-১৯৬৩) পালন করেন।

  • স্বাধীনতার ঘোষণা: তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি তেল আবিবে ইসরায়েলের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এবং দেশটির স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে প্রথম স্বাক্ষর করেন।

  • নেতৃত্ব: তিনি ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শাসনের অধীনে থাকা সময় থেকেই ইহুদি সম্প্রদায়ের (যিশুব) একজন প্রধান নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বেই বিভিন্ন ইহুদি সশস্ত্র বাহিনীকে একত্রিত করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) গঠন করা হয়, যা ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও পটভূমি

ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় ডেভিড বেন-গুরিয়ন ছাড়াও আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অবদান রয়েছে:

  • থিওডোর হার্জল: ১৯ শতকের শেষ দিকে জায়নবাদ আন্দোলনের জনক হিসেবে পরিচিত। তিনিই প্রথম ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা দেন এবং ১৮৯৬ সালে তার বিখ্যাত বই "ডের জুডেনস্টাট" (Der Judenstaat) প্রকাশ করেন।

  • চেইম ওয়াইজম্যান: তিনি একজন বিজ্ঞানী এবং জায়নবাদী নেতা ছিলেন, যিনি ১৯১৭ সালের বালফোর ঘোষণার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই ঘোষণায় ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি 'জাতীয় আবাসভূমি' প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন জানায়। ওয়াইজম্যান পরে ইসরায়েলের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন।

  • আর্থার জেমস বালফোর: তিনি ছিলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যার নামে বালফোর ঘোষণাটি পরিচিত। এই ঘোষণা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে।

মূলত, জায়নবাদী আন্দোলন, ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন এবং সর্বোপরি ডেভিড বেন-গুরিয়নের মতো দূরদর্শী নেতাদের রাজনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন