স্বামী স্ত্রীর আপোষনামা
স্বামী-স্ত্রীর 'আপোষনামা' হলো একটি আইনি বা সামাজিক দলিল, যা পারিবারিক বিরোধ বা ঝগড়া-বিবাদ মীমাংসার পর ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য উভয়ের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়। এটি আদালতের বাইরে সালিশ বা স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য তৈরি করা যেতে পারে।
একটি সাধারণ আপোষনামায় যে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকে, তার একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো। মনে রাখবেন, এটি শুধুমাত্র একটি নমুনা। আইনি প্রয়োজনে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং এটি ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বা উপযুক্ত ফরমেটে তৈরি করা উচিত।
স্বামী-স্ত্রীর আপোষনামা
বিষয়: দাম্পত্য জীবনের বিরোধের স্থায়ী আপোষ-মীমাংসা প্রসঙ্গে।
প্রথম পক্ষ (স্বামী):
নাম: [স্বামীর পুরো নাম]
পিতা/স্বামীর নাম: [পিতার নাম]
ঠিকানা: [বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা]
দ্বিতীয় পক্ষ (স্ত্রী):
নাম: [স্ত্রীর পুরো নাম]
পিতা: [পিতার নাম]
ঠিকানা: [বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা]
পূর্বকথা:
আমরা, প্রথম পক্ষ [স্বামীর নাম] এবং দ্বিতীয় পক্ষ [স্ত্রীর নাম], উভয়ে আইনসম্মতভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের দাম্পত্য জীবনে [বিবাদের ধরন, যেমন: ভুল বোঝাবুঝি/পারিবারিক কলহ/শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি] কারণে মনোমালিন্য ও বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে, ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য এবং এই বিরোধের স্থায়ী মীমাংসার লক্ষ্যে আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিম্নোক্ত শর্তাবলী মেনে আপোষ করলাম:
আপোষের শর্তাবলী:
১। সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা: আমরা উভয়েই অতীত ভুল বোঝাবুঝির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং ভবিষ্যতে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে দাম্পত্য জীবন যাপন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হলাম।
২। স্বামীর অঙ্গীকার:
ক. স্বামী, তার স্ত্রীকে মানসিক, শারীরিক বা অন্য কোনো প্রকার নির্যাতন করবেন না।
খ. স্বামী, তার স্ত্রীর ভরণপোষণ, বাসস্থান এবং চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করবেন।
গ. স্বামী তার স্ত্রীকে শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ভালো ব্যবহার করার সুযোগ দেবেন।
৩। স্ত্রীর অঙ্গীকার:
ক. স্ত্রী, স্বামীর প্রতি বাধ্য ও অনুগত থাকবেন এবং পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করবেন।
খ. স্ত্রী, স্বামী এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে সদাচরণ করবেন এবং কোনো প্রকার ঝগড়া-বিবাদ বা অশালীন কথা বলবেন না।
গ. কোনো প্রকার পারিবারিক ঝগড়া বা মনোমালিন্য হলেও স্ত্রী পূর্বানুমতি ছাড়া পিত্রালয়ে চলে যাবেন না।
৪। মামলা প্রত্যাহার (যদি থাকে): যদি কোনো পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে কোনো মামলা (যেমন: পারিবারিক মামলা, যৌতুক মামলা বা অন্য কোনো ফৌজদারি মামলা) দায়ের করে থাকেন, তবে এই আপোষনামা স্বাক্ষরের পর সেই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নিবেন।
৫। আর্থিক দাবী: বর্তমানে কোনো পক্ষেরই কোনো আর্থিক দাবি-দাওয়া নাই এবং ভবিষ্যতেও এই আপোষ-মীমাংসার কারণে কোনো পক্ষ কোনো ধরনের আর্থিক দাবি উত্থাপন করবেন না।
৬। ভবিষ্যতের অঙ্গীকার: আমরা উভয় পক্ষ অঙ্গীকার করছি যে, ভবিষ্যতে যদি কোনো বিষয়ে পুনরায় বিরোধ সৃষ্টি হয়, তবে আমরা নিজেরাই অথবা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ/সালিশকারীদের মাধ্যমে তা মীমাংসা করব এবং কোনোভাবেই একে অপরের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে যাব না।
স্বাক্ষর:
আমরা উপরোক্ত শর্তাবলী মনোযোগ সহকারে পাঠ করে/শুনে তার মর্মার্থ অবগত হয়ে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আপোষনামায় স্বাক্ষর করলাম।
| প্রথম পক্ষ (স্বামী) | দ্বিতীয় পক্ষ (স্ত্রী) |
| স্বাক্ষর: | স্বাক্ষর: |
| নাম: [স্বামীর পুরো নাম] | নাম: [স্ত্রীর পুরো নাম] |
| তারিখ: | তারিখ: |
সাক্ষীগণ:
নিম্নোক্ত সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে এবং তাদের সামনে আমরা এই আপোষনামায় স্বাক্ষর করি।
| সাক্ষীর ক্রমিক নং | সাক্ষীর নাম ও ঠিকানা | সাক্ষীর স্বাক্ষর |
| ১. | [নাম ও ঠিকানা] | [স্বাক্ষর] |
| ২. | [নাম ও ঠিকানা] | [স্বাক্ষর] |
সালিশকারী/সভাপতির স্বাক্ষর (যদি থাকে):
স্বাক্ষর:
নাম: [সালিশকারীর নাম ও পদবী/পরিচয়]
তারিখ:
গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: আপোষনামা সব ধরনের আইনি জটিলতা বা মামলার ক্ষেত্রে একক সমাধান নাও দিতে পারে। বিশেষ করে তালাক বা গুরুতর ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা এবং আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন