স্বামী স্ত্রীর অমিল

 স্বামী স্ত্রীর অমিল


স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল বা মতপার্থক্য হওয়াটা যেকোনো সম্পর্কেরই একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে এই অমিল যখন দীর্ঘস্থায়ী কলহ বা অশান্তির কারণ হয়, তখনই তা সমস্যা সৃষ্টি করে।

স্বামী-স্ত্রীর অমিলের প্রধান কারণ ও তা দূর করার কিছু উপায় (ইসলামিক এবং সাধারণ) নিচে আলোচনা করা হলো:

স্বামী-স্ত্রীর অমিলের প্রধান কারণসমূহ:

দাম্পত্য জীবনে অমিলের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করতে পারে:

১. যোগাযোগে অভাব (Lack of Communication):

  • পরস্পরের অনুভূতি, চাহিদা বা প্রত্যাশা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ না করা।

  • এক পক্ষ কথা বলতে চাইলেও অন্য পক্ষ এড়িয়ে যাওয়া।

২. ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের অমিল (Personality and Preference Differences):

  • স্বামী বা স্ত্রীর স্বভাব, অভ্যাস বা পছন্দের ভিন্নতা। যেমন, একজন শান্ত অন্যজন খুব বহির্মুখী (Extrovert)।

  • সঙ্গীত, সিনেমা, বই বা অবসর কাটানোর ধরনের ভিন্নতা।

৩. আর্থিক বোঝাপড়ার অভাব (Financial Disagreements):

  • টাকা-পয়সা খরচ করা, সঞ্চয় করা বা আর্থিক বিষয়গুলো পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।

  • আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা না করা।

৪. পারিবারিক হস্তক্ষেপ (Family Interference):

  • শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের অতিরিক্ত বা অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ।

  • পরিবারের প্রতি কার কতটুকু দায়িত্ব, এ নিয়ে মতভেদ।

৫. প্রত্যাশার অমিল (Mismatched Expectations):

  • বিয়ের পর একে অপরের কাছ থেকে অবাস্তব বা অতিরিক্ত প্রত্যাশা রাখা।

  • একজন অন্যজনের দায়িত্ব বা ভূমিকা বুঝতে না পারা।

৬. ভালোবাসার অভাব ও অভিযোগ (Lack of Affection and Complaint):

  • পরস্পরকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া বা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের অভাব।

  • ছোট ছোট ভুল নিয়ে সারাক্ষণ অভিযোগ করা।

অমিল দূর করার উপায় ও সমাধান (ইসলামিক ও সাধারণ):

অমিল দূর করার প্রধান সূত্র হলো পারস্পরিক সমঝোতা, ধৈর্য ও ক্ষমা।

১. যোগাযোগ ও বোঝাপড়া (Communication and Understanding):

  • খোলামেলা আলোচনা: নিজেদের মধ্যে হওয়া ভুল বোঝাবুঝি বা অমিলের কারণগুলো শান্তভাবে আলোচনা করুন।

  • নমনীয়তা ও সমমর্মিতা: অন্যজনের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন, তার অবস্থানে নিজেকে রেখে চিন্তা করুন। ছোটখাটো বিষয়ে ছাড় দিন। (সাধারণ উপায়)

  • সময় দিন: কাজের ব্যস্ততা কমানো এবং স্ত্রীর (বা স্বামীর) সাথে সাপ্তাহিক ডেট নাইট বা একসাথে খাবার সময় কাটানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় দিন।

২. ইসলামিক নির্দেশনা ও আমল:

  • রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ: রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি কোমল ও দয়ালু ছিলেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই উচিত রাসূল (সা.)-এর দাম্পত্য জীবনের আদর্শ অনুসরণ করা।

  • স্ত্রীকে উত্তম ব্যবহার: হাদীসে আছে, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।" (তিরমিযী)। স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করা।

  • দোয়া ও আমল:

    • দাম্পত্য জীবনে শান্তি আনার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। কোরআনে বর্ণিত একটি দোয়া:

      $$\text{رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا}$$

      (উচ্চারণ: রাব্বানা হাব লানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’য়ুনিওঁ ওয়াজ’আলনা লিলমুত্তাক্বীনা ইমামা - অর্থ: হে আমাদের রব! আপনি আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের চোখ জুড়ানো এবং আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানান। - সূরা ফুরকান, আয়াত ৭৪)

    • সালাতের পর এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।

    • নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ আদায় করা, যা হৃদয়ে শান্তি এনে দেয় এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে। (অনেক ইসলামিক স্কলার স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা অমিলের কারণ হিসেবে শয়তানের প্রভাবকে উল্লেখ করেন। সূরা বাকারা, ১০২ আয়াত দ্রষ্টব্য)।

৩. সীমানা নির্ধারণ (Setting Boundaries):

  • পারিবারিক হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকার জন্য স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি স্পষ্ট সীমানা (Boundary) নির্ধারণ করা। তৃতীয় পক্ষের কথা শুনে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না করা। (সাধারণ উপায়)

৪. আত্ম-উন্নয়ন ও ধৈর্য:

  • নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং রাগ বা খারাপ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধৈর্য অনুশীলন করা। (সাধারণ উপায়)

  • স্বামী বা স্ত্রী যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হন বা কোনো বঞ্চনায় ভোগেন, তবে তাকে মমতা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। (সাধারণ উপায়)

মনে রাখবেন, কোনো সম্পর্কেই ১০০% মিল থাকে না। সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে পারস্পরিক ত্যাগ, সম্মান ও নিঃশর্ত ভালোবাসা অপরিহার্য।



স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল বা মতপার্থক্য হওয়াটা যেকোনো সম্পর্কেরই একটি স্বাভাবিক অংশ। তবে এই অমিল যখন দীর্ঘস্থায়ী কলহ বা অশান্তির কারণ হয়, তখনই তা সমস্যা সৃষ্টি করে।

স্বামী-স্ত্রীর অমিলের প্রধান কারণ ও তা দূর করার কিছু উপায় (ইসলামিক এবং সাধারণ) নিচে আলোচনা করা হলো:

স্বামী-স্ত্রীর অমিলের প্রধান কারণসমূহ:

দাম্পত্য জীবনে অমিলের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করতে পারে:

১. যোগাযোগে অভাব (Lack of Communication):

  • পরস্পরের অনুভূতি, চাহিদা বা প্রত্যাশা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ না করা।

  • এক পক্ষ কথা বলতে চাইলেও অন্য পক্ষ এড়িয়ে যাওয়া।

২. ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের অমিল (Personality and Preference Differences):

  • স্বামী বা স্ত্রীর স্বভাব, অভ্যাস বা পছন্দের ভিন্নতা। যেমন, একজন শান্ত অন্যজন খুব বহির্মুখী (Extrovert)।

  • সঙ্গীত, সিনেমা, বই বা অবসর কাটানোর ধরনের ভিন্নতা।

৩. আর্থিক বোঝাপড়ার অভাব (Financial Disagreements):

  • টাকা-পয়সা খরচ করা, সঞ্চয় করা বা আর্থিক বিষয়গুলো পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।

  • আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা না করা।

৪. পারিবারিক হস্তক্ষেপ (Family Interference):

  • শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের অতিরিক্ত বা অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ।

  • পরিবারের প্রতি কার কতটুকু দায়িত্ব, এ নিয়ে মতভেদ।

৫. প্রত্যাশার অমিল (Mismatched Expectations):

  • বিয়ের পর একে অপরের কাছ থেকে অবাস্তব বা অতিরিক্ত প্রত্যাশা রাখা।

  • একজন অন্যজনের দায়িত্ব বা ভূমিকা বুঝতে না পারা।

৬. ভালোবাসার অভাব ও অভিযোগ (Lack of Affection and Complaint):

  • পরস্পরকে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া বা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশের অভাব।

  • ছোট ছোট ভুল নিয়ে সারাক্ষণ অভিযোগ করা।

অমিল দূর করার উপায় ও সমাধান (ইসলামিক ও সাধারণ):

অমিল দূর করার প্রধান সূত্র হলো পারস্পরিক সমঝোতা, ধৈর্য ও ক্ষমা।

১. যোগাযোগ ও বোঝাপড়া (Communication and Understanding):

  • খোলামেলা আলোচনা: নিজেদের মধ্যে হওয়া ভুল বোঝাবুঝি বা অমিলের কারণগুলো শান্তভাবে আলোচনা করুন।

  • নমনীয়তা ও সমমর্মিতা: অন্যজনের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করুন, তার অবস্থানে নিজেকে রেখে চিন্তা করুন। ছোটখাটো বিষয়ে ছাড় দিন। (সাধারণ উপায়)

  • সময় দিন: কাজের ব্যস্ততা কমানো এবং স্ত্রীর (বা স্বামীর) সাথে সাপ্তাহিক ডেট নাইট বা একসাথে খাবার সময় কাটানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় দিন।

২. ইসলামিক নির্দেশনা ও আমল:

  • রাসূল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ: রাসূল (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি কোমল ও দয়ালু ছিলেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই উচিত রাসূল (সা.)-এর দাম্পত্য জীবনের আদর্শ অনুসরণ করা।

  • স্ত্রীকে উত্তম ব্যবহার: হাদীসে আছে, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।" (তিরমিযী)। স্বামীর উচিত স্ত্রীর প্রতি উত্তম ব্যবহার করা।

  • দোয়া ও আমল:

    • দাম্পত্য জীবনে শান্তি আনার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা। কোরআনে বর্ণিত একটি দোয়া:

      $$\text{رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا}$$

      (উচ্চারণ: রাব্বানা হাব লানা মিন আযওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’য়ুনিওঁ ওয়াজ’আলনা লিলমুত্তাক্বীনা ইমামা - অর্থ: হে আমাদের রব! আপনি আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা হবে আমাদের চোখ জুড়ানো এবং আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানান। - সূরা ফুরকান, আয়াত ৭৪)

    • সালাতের পর এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া।

    • নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ আদায় করা, যা হৃদয়ে শান্তি এনে দেয় এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করে। (অনেক ইসলামিক স্কলার স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা অমিলের কারণ হিসেবে শয়তানের প্রভাবকে উল্লেখ করেন। সূরা বাকারা, ১০২ আয়াত দ্রষ্টব্য)।

৩. সীমানা নির্ধারণ (Setting Boundaries):

  • পারিবারিক হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকার জন্য স্বামী-স্ত্রী মিলে একটি স্পষ্ট সীমানা (Boundary) নির্ধারণ করা। তৃতীয় পক্ষের কথা শুনে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি না করা। (সাধারণ উপায়)

৪. আত্ম-উন্নয়ন ও ধৈর্য:

  • নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং রাগ বা খারাপ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধৈর্য অনুশীলন করা। (সাধারণ উপায়)

  • স্বামী বা স্ত্রী যদি মানসিকভাবে অসুস্থ হন বা কোনো বঞ্চনায় ভোগেন, তবে তাকে মমতা ও ভালোবাসার দৃষ্টিতে দেখা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। (সাধারণ উপায়)

মনে রাখবেন, কোনো সম্পর্কেই ১০০% মিল থাকে না। সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে পারস্পরিক ত্যাগ, সম্মান ও নিঃশর্ত ভালোবাসা অপরিহার্য।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন