বাইক কিভাবে চালাতে হয়


 

বাইক চালানো শেখা একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে নিশ্চিত করা জরুরি। বাইক চালানো শেখার জন্য এখানে একটি ধাপে ধাপে নির্দেশিকা দেওয়া হলো:

ধাপ ১: সঠিক প্রস্তুতি

  • সঠিক বাইক নির্বাচন: একজন নতুন চালকের জন্য হালকা ও কম সিসির (যেমন ১২৫-১৫০ সিসি) বাইক বেছে নেওয়া ভালো। এতে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। বাইকের উচ্চতা যেন আপনার সঙ্গে মানানসই হয়, অর্থাৎ বাইকে বসে যেন আপনার দুই পা মাটি স্পর্শ করে, তা নিশ্চিত করুন।

  • নিরাপত্তা সরঞ্জাম: বাইক চালানোর সময় অবশ্যই কিছু জরুরি নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরিধান করতে হবে:

    • হেলমেট: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভালো মানের আইএসআই প্রত্যয়িত হেলমেট পরুন।

    • জ্যাকেট বা ভারী পোশাক: এটি শরীরের উপরের অংশকে রক্ষা করবে।

    • গ্লাভস: হাতকে রক্ষা করবে এবং ভালো গ্রিপ দেবে।

    • লম্বা প্যান্ট: পা'কে রক্ষা করবে।

    • শক্ত জুতো বা কেডস: পায়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

ধাপ ২: বাইকের মৌলিক অংশগুলো বোঝা

বাইক চালানো শুরু করার আগে এর প্রধান অংশগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন:

  • থ্রটল (Throttle): ডান হাতের হ্যান্ডেলে থাকে। এটি ঘোরালে বাইকের গতি বাড়ে।

  • ব্রেক (Brake): সাধারণত দুইটি ব্রেক থাকে:

    • সামনের ব্রেক: ডান হাতের লিভার। এটি বেশি শক্তিশালী।

    • পেছনের ব্রেক: ডান পায়ের প্যাডেল।

  • ক্লাচ (Clutch): বাম হাতের হ্যান্ডেলের লিভার। এটি গিয়ার পরিবর্তনের জন্য অপরিহার্য।

  • গিয়ার শিফটার (Gear Shifter): বাম পায়ের প্যাডেল। গিয়ার আপ এবং ডাউন করতে এটি ব্যবহৃত হয়।

ধাপ ৩: বাইক চালু করা এবং গিয়ার পরিবর্তন করা

  • বাইক চালু করা:

    1. বাইকটি নিউট্রাল গিয়ার আছে কি না, তা নিশ্চিত করুন।

    2. ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকলে 'চোক' অন করে নিন (এটি সাধারণত ক্লাচের কাছে বা ইঞ্জিনের পেছনে থাকে)।

    3. ব্রেক চেপে ধরে ইঞ্জিন স্টার্ট করার বোতাম চাপুন।

    4. ইঞ্জিন চালু হলে কয়েক মিনিটের জন্য এটিকে গরম হতে দিন।

  • গিয়ার পরিবর্তন:

    1. বাইক স্টার্ট করার পর বাম হাতের ক্লাচ লিভারটি সম্পূর্ণ চেপে ধরুন।

    2. বাম পায়ের গিয়ার শিফটার দিয়ে প্রথম গিয়ারে যান।

    3. এবার ধীরে ধীরে ক্লাচ লিভারটি ছেড়ে দিন এবং একই সাথে ডান হাতের থ্রটল ধীরে ধীরে ঘোরান।

    4. বাইক চলতে শুরু করলে গতি বাড়াতে থ্রটল বাড়াতে থাকুন।

    5. উচ্চ গিয়ারে যাওয়ার জন্য থ্রটল ছেড়ে দিন, ক্লাচ চেপে ধরুন এবং গিয়ার শিফটার ব্যবহার করে উপরের গিয়ারে যান। এরপর আবার ধীরে ধীরে ক্লাচ ছেড়ে দিন এবং থ্রটল বাড়ান।

ধাপ ৪: ব্যালেন্স, ব্রেকিং এবং বাঁক নেওয়া

  • ব্যালেন্স: বাইকের ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শেখার জন্য একটি ফাঁকা জায়গায় বাইক নিয়ে ধীরে ধীরে অনুশীলন করুন।

  • ব্রেকিং:

    • থ্রটল ছেড়ে দিন এবং ব্রেক লিভার ও প্যাডেল ধীরে ধীরে চাপুন।

    • হঠাৎ করে জোরে ব্রেক চাপবেন না, এতে বাইক স্কিড করতে পারে।

    • জরুরি অবস্থায় সামনের ও পেছনের উভয় ব্রেক একসাথে ব্যবহার করুন।

  • বাঁক নেওয়া:

    • বাঁক নেওয়ার আগে গতি কমিয়ে নিন।

    • বাঁক নেওয়ার সময় বাইকের সাথে আপনার শরীর সামান্য হেলিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখুন।

    • বাঁক নেওয়ার সময় ব্রেক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

ধাপ ৫: অনুশীলন এবং আত্মবিশ্বাস অর্জন

  • প্রথমদিকে একটি ফাঁকা জায়গায় বাইক চালানোর অনুশীলন করুন।

  • ধীরে ধীরে গতি বাড়ানো এবং কমানোর অভ্যাস করুন।

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে অনুশীলন করলে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

  • মনে রাখবেন, দক্ষতা একদিনে আসে না। ধৈর্য্য ধরে নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনি দক্ষ চালক হয়ে উঠবেন।

গুরুত্বপূর্ণ আইনি নিয়মাবলী

বাইক চালানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয় জানা ও মেনে চলা আবশ্যক:

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স: বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের নিচে কেউ মোটরসাইকেল চালাতে পারবে না। ১৮ বছর হলে আপনি অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া হল প্রথমে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স (লার্নার) নেওয়া, এরপর লিখিত, মৌখিক এবং ফিল্ড টেস্টে উত্তীর্ণ হওয়া।

  • যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন: আপনার বাইকের বৈধ রেজিস্ট্রেশন থাকা আবশ্যক।

  • ট্রাফিক আইন: ট্রাফিক সিগন্যাল, রোডসাইন এবং অন্যান্য ট্রাফিক নিয়ম-কানুন মেনে চলুন।

সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা বাইক চালানোর জন্য অপরিহার্য। যদি সম্ভব হয়, কোনো ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ নিন। এটি আপনাকে নিরাপদ এবং দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন