মেয়েদের থুতনিতে লোম
মেয়েদের থুতনিতে লোম গজানো বা মুখের অন্য কোনো অংশে অতিরিক্ত লোম দেখা যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। চিকিৎসা পরিভাষায় একে হিরসুটিজম (Hirsutism) বলা হয়। এটি কোনো মারাত্মক রোগ নয়, তবে কিছু শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
থুতনিতে লোম গজানোর প্রধান কারণ
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোন সামান্য পরিমাণে থাকে। যখন কোনো কারণে এই হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন মুখে, বুকে, পিঠে বা থুতনিতে লোম দেখা যেতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS): এটি হিরসুটিজমের সবচেয়ে সাধারণ কারণ। PCOS-এ আক্রান্ত হলে ডিম্বাশয়ে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়, যার ফলে শরীরে অ্যান্ড্রোজেনের উৎপাদন বেড়ে যায়। এর সাথে অনিয়মিত মাসিক, ব্রণ এবং ওজন বৃদ্ধির মতো লক্ষণও থাকতে পারে।
বংশগত কারণ: অনেক সময় এটি পারিবারিক বা জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে। যদি আপনার পরিবারের অন্য কোনো নারীর এই সমস্যা থাকে, তবে আপনারও এর ঝুঁকি বেশি।
মেনোপজ: মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যায় এবং অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাব বেড়ে যায়, যা থুতনিতে লোম গজানোর কারণ হতে পারে।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, যেমন স্টেরয়েড, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, হিরসুটিজমের কারণ হতে পারে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা: বিরল কিছু ক্ষেত্রে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির টিউমার বা কুশিং সিন্ড্রোমের মতো হরমোনজনিত রোগের কারণেও থুতনিতে অতিরিক্ত লোম দেখা দিতে পারে।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
যদি আপনার থুতনিতে বা মুখে হঠাৎ করে অতিরিক্ত লোম দেখা যায়, তাহলে একজন ডাক্তারের (বিশেষত একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা গাইনোকোলজিস্ট) পরামর্শ নেওয়া উচিত। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন।
লোম অপসারণের কিছু সাধারণ উপায়:
ওয়াক্সিং, থ্রেডিং, বা টুইজিং: এটি একটি অস্থায়ী সমাধান, যা নিয়মিত করতে হয়।
লেজার হেয়ার রিমুভাল: এটি একটি স্থায়ী সমাধান। এতে লেজার ব্যবহার করে চুলের ফলিকল নষ্ট করা হয়, ফলে লোম আর গজাতে পারে না।
ইলেকট্রোলাইসিস: এই পদ্ধতিতে বিদ্যুতের সাহায্যে চুলের গোড়া নষ্ট করে লোম অপসারণ করা হয়।
ঔষধ: যদি হরমোনজনিত সমস্যার কারণে লোম দেখা দেয়, তবে ডাক্তার কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা হরমোন থেরাপির পরামর্শ দিতে পারেন।
মনে রাখবেন, হিরসুটিজম একটি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা। সঠিক কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন