0 abishkar
শূণ্য (০) এর আবিষ্কার একটি একক ঘটনা নয়, বরং বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন সভ্যতায় এর ধারণা ও ব্যবহার বিকশিত হয়েছে। তবে, আধুনিক গণিতে আমরা যে শূণ্য ব্যবহার করি, তার জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয় ভারতীয় গণিতবিদদের।
ভারতীয় গণিতবিদ: প্রায় ৬ষ্ঠ বা ৭ম শতাব্দীতে ভারতীয় গণিতবিদ ব্রহ্মগুপ্ত প্রথম শূণ্যকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন এবং এর যোগ, বিয়োগ ও গুণের নিয়মাবলী প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে, আর্যভট্টের মতো গণিতবিদরাও শূণ্যকে একটি স্থান-ধারক (placeholder) হিসেবে ব্যবহার করতেন, কিন্তু ব্রহ্মগুপ্তই প্রথম এটিকে একটি সংখ্যা হিসেবে গণনার অন্তর্ভুক্ত করেন।
শূণ্যের বিবর্তন:
মেসোপটেমিয়া (প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ): প্রাচীন ব্যাবিলনীয়রা সংখ্যা পদ্ধতিতে একটি স্থান-ধারক হিসেবে শূণ্যের মতো একটি প্রতীক ব্যবহার করত, কিন্তু এটি একটি সংখ্যা ছিল না।
মায়া সভ্যতা: মায়ারা তাদের ২০-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে শূণ্যের একটি প্রতীক ব্যবহার করত, যা মূলত তাদের পঞ্জিকা ও জ্যোতির্বিদ্যার হিসাব-নিকাশে সহায়ক ছিল।
আরব ও ইউরোপ: ভারতীয় গণিতবিদদের কাজ পরবর্তীতে আরব গণিতবিদদের মাধ্যমে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালীয় গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি তার বই "Liber Abaci"-তে ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতি এবং শূণ্যের ব্যবহারকে ইউরোপে জনপ্রিয় করে তোলেন।
সুতরাং, আধুনিক গণিতে শূণ্যের ব্যবহারের মূল ভিত্তি স্থাপন করেন ভারতীয় গণিতবিদরা, বিশেষ করে ব্রহ্মগুপ্ত।
শূন্য (0) আবিষ্কার কোনো একক ব্যক্তি বা সভ্যতার একক প্রচেষ্টা ছিল না। এর ধারণাটি বিভিন্ন সময়ে ও বিভিন্ন সভ্যতায় ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে। তবে, আধুনিক গণিত ও সংখ্যা পদ্ধতিতে আমরা শূন্যের যে রূপ দেখি, তার জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয় ভারতীয় গণিতবিদদের।
শূন্যের বিকাশের প্রধান পর্যায়
প্রাচীন সভ্যতা (স্থানধারক হিসেবে ব্যবহার)
মেসোপটেমিয়া: প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনীয়রা তাদের সংখ্যা পদ্ধতিতে একটি শূন্য-সদৃশ প্রতীক ব্যবহার করত, তবে এটি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ছিল না, বরং কেবল একটি স্থান পূরণকারী (placeholder) হিসেবে কাজ করত।
মায়া সভ্যতা: মায়া সভ্যতার লোকেরা ২০-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্যের প্রতীক ব্যবহার করত, যা মূলত পঞ্জিকা ও জ্যোতির্বিদ্যার গণনায় ব্যবহৃত হতো।
ভারতীয় গণিতবিদগণ (সংখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা)
ব্রহ্মগুপ্ত (Brahmagupta): ৭ম শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ব্রহ্মগুপ্ত-কে শূন্যের আধুনিক ধারণার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম শূন্যকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন এবং শূন্যের যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের নিয়মাবলী তাঁর "ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত" গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন।
আর্যভট্ট (Aryabhata): যদিও তার কাজে সরাসরি শূন্যের প্রতীক পাওয়া যায় না, তার জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব থেকে বোঝা যায় যে তিনি স্থানীয় মান (place value) সম্পর্কে অবগত ছিলেন, যা শূন্যের ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আরব ও ইউরোপে বিস্তার
ভারতীয় গণিতবিদদের এই ধারণা পরবর্তীতে আরব গণিতবিদদের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আল-খোয়ারিজমি (Al-Khwarizmi)-এর মতো বিজ্ঞানীরা শূন্যের এই পদ্ধতিকে আরও উন্নত করেন। এরপর, ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালীয় গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি (Fibonacci) তার বই "Liber Abaci"-তে শূন্যসহ ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিকে ইউরোপে পরিচিত করান।
সুতরাং, শূন্যের ধারণাটি বিভিন্ন সভ্যতা থেকে এলেও, এটিকে একটি সংখ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও তার গাণিতিক নিয়মাবলী প্রণয়নের জন্য ভারতীয় গণিতবিদদের, বিশেষ করে ব্রহ্মগুপ্তকে, শূন্যের আবিষ্কারক বলা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন