0 কে আবিষ্কার করেন
শূন্য (0) কে এককভাবে কোনো একজন ব্যক্তি আবিষ্কার করেননি। বরং, এর ধারণা ও ব্যবহার বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন সভ্যতায় বিকশিত হয়েছে। তবে, আধুনিক গণিত এবং দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্যের যে ব্যবহার আমরা দেখি, তার জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব দেওয়া হয় ভারতীয় গণিতবিদদের।
এখানে শূন্যের বিকাশের কয়েকটি ধাপ তুলে ধরা হলো:
১. প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও মায়া সভ্যতা:
মেসোপটেমিয়া: ব্যাবিলনীয়রা প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তাদের সংখ্যা পদ্ধতিতে একটি স্থানধারক (placeholder) হিসেবে শূন্যের মতো একটি প্রতীক ব্যবহার করত। তবে এটি একটি প্রকৃত সংখ্যা ছিল না এবং সমীকরণ বা গণনার জন্য ব্যবহৃত হতো না।
মায়া সভ্যতা: মায়া সভ্যতার লোকেরা ২০-ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতিতে শূন্যের প্রতীক ব্যবহার করত, যা জ্যোতির্বিদ্যা ও পঞ্জিকার গণনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
২. ভারতীয় গণিতবিদগণ:
ব্রহ্মগুপ্ত (Brahmagupta): ৭ম শতাব্দীর ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ব্রহ্মগুপ্তই সর্বপ্রথম শূন্যকে একটি প্রকৃত সংখ্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। তিনি শূন্যের যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগের নিয়মাবলীও বর্ণনা করেন। তার কাজ "ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্ত" গ্রন্থে এই নিয়মগুলো পাওয়া যায়।
আর্যভট্ট (Aryabhata): যদিও তার কাজগুলোতে সরাসরি শূন্যের প্রতীক পাওয়া যায় না, তবে তার গাণিতিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব থেকে বোঝা যায় যে তিনি স্থানীয় মান (place value) ধারণার সাথে পরিচিত ছিলেন এবং সম্ভবত শূন্যের একটি প্রাথমিক রূপ ব্যবহার করতেন।
৩. আরব ও ইউরোপ:
ভারতীয় গণিতবিদদের কাজগুলো আরব গণিতবিদদের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। আল-খোয়ারিজমি (Al-Khwarizmi)-এর মতো গণিতবিদরা শূন্যের ধারণা ইউরোপে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালীয় গণিতবিদ ফিবোনাচ্চি (Fibonacci) তার বই "Liber Abaci"-তে শূন্যসহ ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতিকে ইউরোপে পরিচিত করেন, যা পরবর্তীতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
সুতরাং, যদিও বিভিন্ন সভ্যতা শূন্যের ধারণা ব্যবহার করেছে, ব্রহ্মগুপ্তকে একজন গণিতবিদ হিসেবে সর্বপ্রথম শূন্যকে একটি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়, যা আধুনিক গণিতের ভিত্তি স্থাপন করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন