কল্যাণ রাষ্ট্রের জনক কে

 কল্যাণ রাষ্ট্রের জনক কে

কল্যাণ রাষ্ট্রের কোনো একক জনক নেই, তবে এই ধারণার বিকাশে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক নেতার অবদান রয়েছে।

তবে, জার্মান চ্যান্সেলর অটো ফন বিসমার্ক-কে প্রায়শই আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অটো ফন বিসমার্ক এবং তার অবদান

উনিশ শতকের শেষের দিকে জার্মানির চ্যান্সেলর থাকাকালীন বিসমার্ক কিছু যুগান্তকারী সামাজিক নিরাপত্তা আইন চালু করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • স্বাস্থ্য বীমা (১৮৮৩): শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হয়।

  • দুর্ঘটনা বীমা (১৮৮৪): কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে আহত শ্রমিকদের জন্য বীমা সুবিধা প্রদান করা হয়।

  • বার্ধক্য ও অক্ষমতা বীমা (১৮৮৯): বৃদ্ধ ও অক্ষম শ্রমিকদের জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়।

বিসমার্ক এই আইনগুলো প্রবর্তন করেছিলেন রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা কমানোর জন্য এবং শ্রমিকদের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থন হ্রাস করার জন্য। যদিও তার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক ছিল, এই আইনগুলোই প্রথম সরকার-চালিত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে, যা পরবর্তীতে অন্যান্য দেশে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।


অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব

  • জন মেনার্ড কেইনস: তার অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলো (বিশেষ করে ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার সময়) কল্যাণ রাষ্ট্রের নীতিগুলোকে তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রদান করে। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, সরকারি ব্যয় এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • উইলিয়াম বেভারিজ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম বেভারিজ একটি বিস্তৃত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার রূপরেখা দেন। তার বিখ্যাত বেভারিজ রিপোর্ট (১৯৪২)-এ তিনি বেকারত্ব, রোগ, অজ্ঞতা, অপরিচ্ছন্নতা এবং দারিদ্র্য—এই পাঁচটি "দৈত্য"-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন। এই রিপোর্টটি ব্রিটিশ কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি ছিল।



কল্যাণ রাষ্ট্রের কোনো একক জনক নেই, তবে এই ধারণার বিকাশে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক নেতার অবদান রয়েছে। তারপরও, যদি একজনকে এই ধারণার প্রধান প্রবক্তা হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়, তাহলে তিনি হলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস

জন মেনার্ড কেইনসের অবদান

কেইনস (John Maynard Keynes) তাঁর "দ্য জেনারেল থিওরি অফ এমপ্লয়মেন্ট, ইন্টারেস্ট অ্যান্ড মানি" (The General Theory of Employment, Interest and Money) গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে, অর্থনৈতিক মন্দার সময় সরকারকে অবশ্যই জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ ব্যয় করতে হবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তাঁর তত্ত্বটি কল্যাণ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তির মূল ধারণা হিসেবে কাজ করে।

অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব

  • অটো ভন বিসমার্ক: জার্মান চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্ককে (Otto von Bismarck) আধুনিক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অন্যতম পথিকৃৎ ধরা হয়। উনিশ শতকের শেষের দিকে তিনি জার্মানিতে শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বিমা, দুর্ঘটনা বিমা এবং পেনশন স্কিম চালু করেছিলেন।

  • উইলিয়াম বেভারিজ: ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম বেভারিজ (William Beveridge) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যে "বেভারিজ রিপোর্ট" নামে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা পেশ করেন। এই রিপোর্টে তিনি সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচির প্রস্তাব করেন, যা পরবর্তীতে ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (NHS) প্রতিষ্ঠার ভিত্তি স্থাপন করে।

  • বিসমার্ক ও বেভারিজের মডেল: কল্যাণ রাষ্ট্র সাধারণত এই দুই মডেলের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। বিসমার্কের মডেলটি সামাজিক বিমা নীতির ওপর জোর দেয়, যেখানে সুবিধাগুলো মূলত কর্মজীবনের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, বেভারিজের মডেলটি সার্বজনীন নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেখানে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমানভাবে সুবিধা পায়।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন