চারুকলার জনক কে
চারুকলার কোনো একক "জনক" নেই, কারণ চারুকলা বা ফাইন আর্টস একটি বিশাল এবং বহু-শাখা বিশিষ্ট ক্ষেত্র, যা মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই বিকশিত হয়েছে। তবে, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে "জনক" হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১. শিল্পকলার ইতিহাসের জনক (Father of Art History):
জর্জো ভাসারি (Giorgio Vasari)-কে প্রায়শই "শিল্পকলার ইতিহাসের জনক" বলা হয়। তিনি একজন ইতালীয় চিত্রশিল্পী, স্থপতি, এবং জীবনীকার ছিলেন।
তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'লিভস অফ দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট পেইন্টারস, স্কাল্পটারস, অ্যান্ড আর্কিটেকটস' (The Lives of the Most Excellent Painters, Sculptors, and Architects) রেনেসাঁস যুগের শিল্পকলার ইতিহাস এবং শিল্পীদের জীবনী নিয়ে লেখা প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই বইটি শিল্পকলার ইতিহাস চর্চার ভিত্তি স্থাপন করে।
২. রেনেসাঁস যুগের আধুনিক চারুকলার জনক:
রেনেসাঁস শিল্পকলা মানব ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই সময়ে মানবতাবাদ এবং বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে শিল্পের নতুন ধারা তৈরি হয়। এই ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী হলেন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি (Leonardo da Vinci)।
তাকে প্রায়শই "রেনেসাঁস মানব" (Renaissance Man) বলা হয় কারণ তিনি শুধু একজন চিত্রশিল্পীই নন, বরং একজন ভাস্কর, স্থপতি, সঙ্গীতজ্ঞ, বিজ্ঞানী, এবং উদ্ভাবকও ছিলেন। তার কাজগুলি, যেমন 'মোনালিসা' এবং 'দ্য লাস্ট সাপার', চারুকলার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।
৩. বাংলাদেশের চারুকলার জনক:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চারুকলার জনক হিসেবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন-কে সর্বসম্মতিক্রমে গণ্য করা হয়।
তার নিরলস প্রচেষ্টা এবং দূরদৃষ্টির ফলস্বরূপ ১৯৪৮ সালে ঢাকায় 'গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্ট' (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে আধুনিক চারুকলার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি স্থাপন করে।
'চারুকলা' (Fine Arts) একটি ব্যাপক এবং বহুস্তরীয় ক্ষেত্র, তাই এর একক কোনো "জনক" নেই। তবে, চারুকলার ইতিহাস, গবেষণা এবং প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে এর জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শিল্পকলার ইতিহাস ও শিল্পের জীবনী লেখার জনক:
যদি শিল্পকলার ইতিহাস রচনার দিক থেকে বিবেচনা করা হয়, তাহলে জর্জো ভাসারি (Giorgio Vasari)-কে "আর্ট হিস্টরি" বা "শিল্পকলার ইতিহাসের জনক" হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি একজন ইতালীয় চিত্রশিল্পী, স্থপতি এবং লেখক ছিলেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থ "লিভস অফ দ্য মোস্ট এক্সেলেন্ট পেইন্টারস, স্কাল্পটারস, অ্যান্ড আর্কিটেক্টস" (Lives of the Most Excellent Painters, Sculptors, and Architects) রেনেসাঁস যুগের শিল্পীদের জীবন ও কর্মের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই বইটি পশ্চিমা শিল্প-ঐতিহাসিক লেখার ভিত্তি স্থাপন করে।
বাংলাদেশের চারুকলার জনক:
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, নিঃসন্দেহে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন-কে আধুনিক চারুকলার জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার অবদানের কারণগুলো হলো:
প্রাতিষ্ঠানিক চারুশিক্ষা প্রতিষ্ঠা: তিনিই ১৯৪৮ সালে ঢাকায় "গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট" (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) প্রতিষ্ঠা করেন, যা বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চারুশিক্ষার সূচনা করে।
দেশীয় চিত্রকলার ধারা সৃষ্টি: তিনি বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকে তার শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তরের ওপর আঁকা তার স্কেচগুলো বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করে এবং দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা তুলে ধরে।
শিল্প আন্দোলনের নেতৃত্ব: তিনি বাংলার শিল্পকলা আন্দোলনকে আধুনিকতা এবং দেশীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে একটি নতুন দিশা দিয়েছেন।
সংক্ষেপে, চারুকলার মতো বিস্তৃত ক্ষেত্রে একজন একক জনক নেই, তবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ব্যক্তিকে এই সম্মান দেওয়া হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন