জামা সেলাই করার ডিজাইন

 জামা সেলাই করার ডিজাইন

জামা সেলাই করার ডিজাইনের ক্ষেত্রে মূলত গলা (Neckline), হাতা (Sleeve) এবং ঘের/প্লিট/বডি কাটিং (Body Design)-এ বৈচিত্র্য আনা হয়। আপনি কী ধরনের জামা (যেমন: সাধারণ কামিজ, গোল জামা, ফ্রক, আনারকলি, নাইরা কাট ইত্যাদি) সেলাই করতে চান, তার ওপর ডিজাইন নির্ভর করে।

২০২৫ সালের ট্রেন্ড এবং প্রচলিত জনপ্রিয় কিছু জামা সেলাইয়ের ডিজাইন নিচে দেওয়া হলো:


১. গলার ডিজাইন (Neck Designs)

গলার নকশা একটি জামাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপ দিতে পারে।

গলার ডিজাইনবৈশিষ্ট্যকীভাবে সেলাই করবেন
বোট নেক (Boat Neck)কাঁধ ঘেঁষা চওড়া, নৌকার মতো আকৃতি।এটি সাধারণত পেস্টিং বা বকরম দিয়ে তৈরি করা হয় এবং উল্টে সেলাই করা হয়। পিছনে বোতাম বা হুক যোগ করা যেতে পারে।
ভি-নেক উইথ প্লিট (V-Neck with Pleat)ভি-আকৃতির গলার নিচে ছোট ছোট প্লিট বা কুচি দিয়ে বোতাম বা ফিতা যোগ করা হয়।ভি-আকৃতি কাটার পর প্লিটের জন্য সামান্য অতিরিক্ত কাপড় কেটে যোগ করতে হয়।
কীপ্যাড বা কি-হোল (Keyhole)যেকোনো গলার (গোল/ভি) মাঝখানে একটি ছোট গোলাকার বা ড্রপ-আকৃতির ফাঁকা অংশ রাখা হয়।এই ফাঁকা অংশটি ফিনিশিং-এর জন্য সুন্দর করে পাইপিং বা বকরম দিয়ে সেলাই করতে হয়।
কলার নেক (Collar Neck)শার্টের কলার, ব্যান্ড কলার (চায়নিজ কলার) অথবা বেন কলার ব্যবহার করা হয়।কলার কাটিং ও সেলাইয়ের জন্য সঠিক সূত্র জানা জরুরি, যা জামার কাটিং-এর সাথে মানানসই হতে হবে।
প্লাকেট নেক (Placket Neck)সামনে বোতামের ঘর বা ফিতা লাগানোর জন্য লম্বা ফাড়া রাখা হয়, যা ডিজাইনের মূল অংশ।প্লাকেট অংশটি প্রথমে আলাদাভাবে সেলাই করে মূল জামার সাথে জুড়ে দিতে হয়।

২. হাতার ডিজাইন (Sleeve Designs)

হাতার নকশা জামার আধুনিকতা ফুটিয়ে তোলে।

হাতার ডিজাইনবৈশিষ্ট্যকীভাবে সেলাই করবেন
পাফ হাতা (Puff Sleeve)কাঁধের কাছে কুচি বা প্লিট দিয়ে ফোলা আকৃতি তৈরি করা হয়।হাতার টুপ অংশের (মাথা) কাছে অতিরিক্ত কাপড় রেখে কুচি বা প্লিট দিয়ে সেলাই করতে হয়।
বেল হাতা (Bell Sleeve)কনুই থেকে বা পুরো হাতাটি ঘণ্টার মতো চওড়া বা ফ্লেয়ার্ড থাকে।কনুই পর্যন্ত সোজা কেটে, তারপর নিচের অংশ ফ্লেয়ার দিয়ে আলাদা কাপড় যোগ করা যায়।
ফ্লাউন্স হাতা (Flounce/Layered Sleeve)হাতার শেষে ছোট একটি অতিরিক্ত কাপড়ের ঢেউ খেলানো লেয়ার যোগ করা হয়।এটি সাধারণত ২-৩ ইঞ্চি চওড়া গোল করে কাটা অংশ যা হাতার মুখের সাথে সেলাই করা হয়।
কাপ হাতা (Cuff Sleeve)হাতার শেষে আলাদা কাপড়ের চওড়া কাফ বা ব্যান্ড সেলাই করা হয়।হাতার মুহুরী সোজা রেখে কলারের মতো কাপড়ের টুকরা সেলাই করে বোতাম লাগানো হয়।
বল হাতা (Balloon Sleeve)হাতার মাঝের অংশ ফোলা এবং কাঁধ ও মুগরি অংশ ফিটিং থাকে।মাঝের অংশের জন্য প্রচুর অতিরিক্ত কাপড় রেখে কাঁধ ও মুগরিকে প্লিট বা কুচি দিয়ে ছোট করতে হয়।

৩. বডি এবং ঘেরের ডিজাইন (Body and Flare Designs)

বডির কাটিং-এর ওপর ভিত্তি করে জামার স্টাইল তৈরি হয়।

ডিজাইনের ধরনবৈশিষ্ট্যসেলাই টিপস
আলিয়া কাট (Alia Cut)বডির অংশে ভি-আকৃতির যোগ (Yoke) থাকে এবং এর নিচে কুচি বা প্লিট দিয়ে ঘের তৈরি করা হয়।বডির অংশ ও নিচের ঘেরের অংশ আলাদাভাবে কেটে, ভি-শেপে সেলাই করে জুড়ে দিতে হয়।
নাইরা কাট (Naira Cut)এটি সাধারণত সোজা কুর্তি, কিন্তু কোমরের কাছে সাইডে লম্বা ফাড়া এবং মাঝখানে প্লিট বা ফিতা যোগ করা হয়।জামার সাইড ফাড়ার জায়গায় ফিতা বা ট্যাসেল যোগ করে একটু ভিন্ন লুক দেওয়া হয়।
গোল জামা / আম্ব্রেলা ফ্রক (Umbrella Frock)পুরো জামাটি ছাতার মতো গোল কাটিং-এর হয়, নিচের দিকে প্রচুর ঘের থাকে।কাপড়কে কোণাকুণি ভাঁজ করে ঘেরের জন্য মেপে কেটে নিতে হয়। সেলাইয়ে ফিনিশিং-এর জন্য হেম-এ চিকন সেলাই জরুরি।
লেয়ার্ড কুর্তি (Layered Kurti)বডির নিচে ২-৩টি লেয়ার বা ঢেউ খেলানো স্তরের ঘের যোগ করা হয়।প্রতিটি স্তর আলাদাভাবে কুচি বা প্লিট দিয়ে সেলাই করে মূল জামার সাথে জুড়ে দিতে হয়।
অ্যাসিম্যাট্রিক/হাই-লো (High-Low)জামার পেছনের অংশ সামনের চেয়ে বেশি লম্বা হয়।ঘেরের কাটিং-এর সময় সামনে ছোট ও পেছনে লম্বা করে কেটে সেলাই করতে হয়।

সাধারণ সেলাই টিপস:

  • পাইপিং ও লেস: গলা, হাতা ও ঘেরে কনট্রাস্ট রঙের পাইপিং অথবা জ্যামিতিক নকশার লেস ব্যবহার করলে সিম্পল জামাকেও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।

  • প্লিট ব্যবহার: বডির মাঝখানে বা কোমরের দু'পাশে সামান্য প্লিট বা কুচি ব্যবহার করে ফিটিং আরও সুন্দর করা যায়।

  • হাতের কাজ: সুতি বা লিনেন কাপড়ের জামায় কাঁথা স্টিচ, গুজরাটি সেলাই বা সিম্পল হাতের কাজের নকশা (যেমন: সুতার ফুল, পাতা) গলায় বা হাতায় সেলাই করলে ঐতিহ্যবাহী রূপ আসে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন