স্বামী স্ত্রীর খেদমতের ওয়াজ
স্বামী-স্ত্রীর খেদমত নিয়ে বিভিন্ন ইসলামি বক্তাগণ (যেমন মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ) গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ বা আলোচনা করে থাকেন। এই ওয়াজগুলোতে সাধারণত ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার, কর্তব্য এবং একে অপরের প্রতি খেদমতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। নিচে এই ওয়াজগুলোর মূলভাব এবং গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো: ### **স্বামী-স্ত্রীর খেদমতের ওয়াজের মূল আলোচনা** ইসলামে দাম্পত্য জীবনকে 'সাকিনা' বা মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। খেদমত বলতে কেবল কাজ করা বোঝায় না, বরং আন্তরিকতা, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সম্মানকে বোঝায়। #### **১. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর খেদমত ও দায়িত্ব (স্ত্রীর হক):** ওয়াজে সাধারণত জোর দেওয়া হয় যে, স্বামী শুধুমাত্র কর্তা নয়, বরং স্ত্রীর প্রতি তার অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। * **সুন্দর ব্যবহার ও ভালোবাসা:** রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।" স্বামী স্ত্রীকে ভালোবাসা দেবে, তার সাথে কোমল ব্যবহার করবে এবং কখনো খারাপ ভাষা ব্যবহার করবে না। * **আর্থিক নিরাপত্তা:** স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান দেওয়া স্বামীর প্রধান কর্তব্য। ইসলামে এটি স্বামীর ওপর ফরজ। * **কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা:** স্ত্রীর ছোটখাটো ভুল বা ত্রুটিকে ক্ষমা করা এবং বিনা কারণে তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। * **কাজের সহযোগিতা:** যদিও ইসলামে ঘরের কাজ স্ত্রীর ওপর আবশ্যক করেনি, কিন্তু রাসূল (সা.) যেমন তাঁর স্ত্রীদের কাজে সাহায্য করতেন, তেমনই স্বামীকে ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করা হয়। * **স্ত্রীর প্রতি সুবিচার:** একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সুবিচার নিশ্চিত করা। #### **২. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর খেদমত ও কর্তব্য (স্বামীর হক):** স্ত্রীর খেদমতকে অনেক ওয়াজে জান্নাত লাভের সহজ পথ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। * **আনুগত্য:** ইসলামের সীমারেখার মধ্যে থেকে স্বামীর বৈধ আদেশ মেনে চলা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। তবে আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার নির্দেশ দিলে, তা মানা যাবে না। * **স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা:** হাদিসে বলা হয়েছে, "যদি কোনো স্ত্রী এমন অবস্থায় মারা যায় যে তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" তাই সাধ্যমতো স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা। * **স্বামীর সম্পদের হেফাজত:** স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা। * **ঘরের দায়িত্ব পালন:** ঘর-সংসার গুছিয়ে রাখা এবং স্বামীর প্রয়োজন মেটানো। * **স্বামীর জন্য সাজসজ্জা:** স্বামীকে আকৃষ্ট করার জন্য নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত রাখা। #### **৩. খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত লাভ:** অনেক বক্তা নারী সাহাবীদের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, স্ত্রীর জন্য স্বামীর খেদমত একটি ইবাদত। যদি কোনো নারী স্বামীর হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং ইসলামের অন্যান্য ফরজ ইবাদতগুলো পালন করে, তবে তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে। #### **৪. ঝগড়া-বিবাদ নিরসনের উপায়:** খেদমতের ওয়াজগুলোতে দাম্পত্য কলহ নিরসনের জন্য ধৈর্য, ক্ষমা এবং একে অপরের অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়। বলা হয় যে, ছোটখাটো বিষয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলেই সংসারে শান্তি বজায় থাকে। --- **সারকথা:** ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। খেদমত কেবল একপাক্ষিক নয়; স্বামী যেমন স্ত্রীকে ভালোবাসা, ভরণ-পোষণ ও সম্মান দিয়ে খেদমত করবে, তেমনি স্ত্রীও আনুগত্য, পরিচর্যা ও আন্তরিকতা দিয়ে স্বামীকে খেদমত করবে। এই পারস্পরিক দায়িত্ব পালনই একটি সুখী ও আদর্শ দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি।
স্বামী-স্ত্রীর খেদমত নিয়ে বিভিন্ন ইসলামি বক্তাগণ (যেমন মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী প্রমুখ) গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ বা আলোচনা করে থাকেন। এই ওয়াজগুলোতে সাধারণত ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার, কর্তব্য এবং একে অপরের প্রতি খেদমতের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
নিচে এই ওয়াজগুলোর মূলভাব এবং গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
### **স্বামী-স্ত্রীর খেদমতের ওয়াজের মূল আলোচনা**
ইসলামে দাম্পত্য জীবনকে 'সাকিনা' বা মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির উৎস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। খেদমত বলতে কেবল কাজ করা বোঝায় না, বরং আন্তরিকতা, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সম্মানকে বোঝায়।
#### **১. স্ত্রীর প্রতি স্বামীর খেদমত ও দায়িত্ব (স্ত্রীর হক):**
ওয়াজে সাধারণত জোর দেওয়া হয় যে, স্বামী শুধুমাত্র কর্তা নয়, বরং স্ত্রীর প্রতি তার অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে।
* **সুন্দর ব্যবহার ও ভালোবাসা:** রাসূল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম।" স্বামী স্ত্রীকে ভালোবাসা দেবে, তার সাথে কোমল ব্যবহার করবে এবং কখনো খারাপ ভাষা ব্যবহার করবে না।
* **আর্থিক নিরাপত্তা:** স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান দেওয়া স্বামীর প্রধান কর্তব্য। ইসলামে এটি স্বামীর ওপর ফরজ।
* **কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা:** স্ত্রীর ছোটখাটো ভুল বা ত্রুটিকে ক্ষমা করা এবং বিনা কারণে তাকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা।
* **কাজের সহযোগিতা:** যদিও ইসলামে ঘরের কাজ স্ত্রীর ওপর আবশ্যক করেনি, কিন্তু রাসূল (সা.) যেমন তাঁর স্ত্রীদের কাজে সাহায্য করতেন, তেমনই স্বামীকে ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করা হয়।
* **স্ত্রীর প্রতি সুবিচার:** একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সুবিচার নিশ্চিত করা।
#### **২. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর খেদমত ও কর্তব্য (স্বামীর হক):**
স্ত্রীর খেদমতকে অনেক ওয়াজে জান্নাত লাভের সহজ পথ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
* **আনুগত্য:** ইসলামের সীমারেখার মধ্যে থেকে স্বামীর বৈধ আদেশ মেনে চলা স্ত্রীর জন্য আবশ্যক। তবে আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার নির্দেশ দিলে, তা মানা যাবে না।
* **স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখা:** হাদিসে বলা হয়েছে, "যদি কোনো স্ত্রী এমন অবস্থায় মারা যায় যে তার স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।" তাই সাধ্যমতো স্বামীকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করা।
* **স্বামীর সম্পদের হেফাজত:** স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা।
* **ঘরের দায়িত্ব পালন:** ঘর-সংসার গুছিয়ে রাখা এবং স্বামীর প্রয়োজন মেটানো।
* **স্বামীর জন্য সাজসজ্জা:** স্বামীকে আকৃষ্ট করার জন্য নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত রাখা।
#### **৩. খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত লাভ:**
অনেক বক্তা নারী সাহাবীদের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, স্ত্রীর জন্য স্বামীর খেদমত একটি ইবাদত। যদি কোনো নারী স্বামীর হক যথাযথভাবে আদায় করে এবং ইসলামের অন্যান্য ফরজ ইবাদতগুলো পালন করে, তবে তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে।
#### **৪. ঝগড়া-বিবাদ নিরসনের উপায়:**
খেদমতের ওয়াজগুলোতে দাম্পত্য কলহ নিরসনের জন্য ধৈর্য, ক্ষমা এবং একে অপরের অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়। বলা হয় যে, ছোটখাটো বিষয়ে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকলেই সংসারে শান্তি বজায় থাকে।
---
**সারকথা:** ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। খেদমত কেবল একপাক্ষিক নয়; স্বামী যেমন স্ত্রীকে ভালোবাসা, ভরণ-পোষণ ও সম্মান দিয়ে খেদমত করবে, তেমনি স্ত্রীও আনুগত্য, পরিচর্যা ও আন্তরিকতা দিয়ে স্বামীকে খেদমত করবে। এই পারস্পরিক দায়িত্ব পালনই একটি সুখী ও আদর্শ দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন