শিক্ষার আবিষ্কারক কে
শিক্ষার কোনো একক আবিষ্কারক নেই, কারণ এটি মানব সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়েছে। তবে, আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করার জন্য অনেককেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
শিক্ষার বিবর্তন: প্রাচীন থেকে আধুনিক 📜
প্রাচীন যুগ: আদিম সমাজে শিক্ষা ছিল মূলত মৌখিক এবং অনানুষ্ঠানিক। এটি পরিবার বা সম্প্রদায়ের প্রবীণদের কাছ থেকে শেখা হতো, যেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা যেমন শিকার, কৃষি বা হস্তশিল্প শেখানো হতো। প্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া, ভারত এবং চীনে প্রথম লিখিত ভাষার আবিষ্কারের পর ধর্মীয়, প্রশাসনিক এবং সামরিক জ্ঞানভিত্তিক আনুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। প্রাচীন ভারতের গুরুকুল প্রথা এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
আধুনিক যুগ: আধুনিক, সংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থা, যা আমরা বর্তমানে দেখি, তার ভিত্তি তৈরি হয় মূলত হোরেস ম্যান (Horace Mann) নামক একজন আমেরিকান শিক্ষাবিদের হাত ধরে। তিনি উনিশ শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 'কমন স্কুল' আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলন সবার জন্য, বিশেষ করে দরিদ্র শিশুদের জন্য, করের টাকায় পরিচালিত একটি সর্বজনীন এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এই ধারণাই ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং আজকের আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো তৈরি করে।
সুতরাং, যদিও শিক্ষার ধারণাটি প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান, হোরেস ম্যানকে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থার স্থপতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
শিক্ষার কোনো একক আবিষ্কারক নেই, কারণ এটি মানব সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে। এটি কোনো একজন ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোনো সময়ের আবিষ্কার নয়, বরং মানুষের সম্মিলিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ফসল।
তবে, শিক্ষার ধারণার ইতিহাসকে কয়েকটি প্রধান ধাপে ভাগ করা যেতে পারে:
প্রাগৈতিহাসিক যুগ
প্রাচীনকালে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা (যেমন: শিকার, আগুন জ্বালানো, সরঞ্জাম তৈরি) একে অপরের কাছ থেকে শিখত। এটি ছিল শিক্ষার সবচেয়ে প্রাথমিক রূপ, যা ছিল সম্পূর্ণ অনানুষ্ঠানিক এবং অভিজ্ঞতানির্ভর।
প্রাচীন সভ্যতা
লিখিত ভাষা এবং সমাজের কাঠামো গড়ে ওঠার পর শিক্ষার ধারণা আরও সংগঠিত হতে শুরু করে।
প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়া: এখানে লেখা ও গণিত শেখানো হত, যা মূলত ধর্মীয় এবং প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত পুরোহিত ও আমলাদের জন্য প্রয়োজন ছিল।
প্রাচীন গ্রিস: এখানে শিক্ষার ধারণা আরও ব্যাপকতা লাভ করে। সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল-এর মতো দার্শনিকরা যুক্তি, দর্শন ও নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার একটি কাঠামো তৈরি করেন। প্লেটোর প্রতিষ্ঠিত 'একাডেমি'কে ইউরোপের প্রথম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা হয়।
প্রাচীন ভারত: বৈদিক যুগে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় শিক্ষা দেওয়া হতো। গুরুগৃহে থেকে শিষ্যরা বেদ, দর্শন এবং অন্যান্য শাস্ত্র অধ্যয়ন করত। এই পদ্ধতিতে গুরুই ছিলেন শিক্ষার মূল কেন্দ্র।
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা
আধুনিক যুগে এসে শিক্ষার ধারণা আরও প্রাতিষ্ঠানিক ও সর্বজনীন রূপ লাভ করে। এই ধারায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন:
হোরাস ম্যান (Horace Mann): তাকে প্রায়শই আধুনিক আমেরিকান পাবলিক স্কুল ব্যবস্থার "জনক" হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯ শতকে তিনি এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কাজ করেন, যেখানে সকল শিশু, ধনী-গরিব নির্বিশেষে, সরকারি অর্থায়নে মানসম্মত শিক্ষা পাবে। তার এই উদ্যোগ আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোতে নিয়ে আসে।
সুতরাং, শিক্ষা কোনো একক আবিষ্কার নয়, বরং মানবজাতির সম্মিলিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার ধারাবাহিক বিবর্তনের ফল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন